১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটে নৌযান শ্রমিকরা প্রকাশিত: ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ জাগ্রত বাংলাদেশ নিজস্ব প্রতিবেদক: নিয়োগপত্র ও খাবার ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে এবার ধর্মঘটে যাচ্ছেন নৌ শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ধর্মঘট শুরুর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। এই ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ৪৩টি নৌপথে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে যাত্রী ও পণ্যবাহীসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকছে। নৌযান শ্রমিকদের আটটি সংগঠনের জোট বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ নিয়ে গত এক বছরে তিনবার ধর্মঘটের ডাক দিল নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ১১ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করে আসছি। লঞ্চ মালিকপক্ষ শুধু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি?। গত বুধবারও সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে বসেছিলাম, কিন্তু আবারও আশ্বাস। তাই শ্রমিকরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়ায় আমরা ধর্মঘটে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করেছিলাম, ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলাম। মালিকপক্ষ বলেছিল, আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণ করে দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো দাবি দাওয়া পূরণ করেনি।’ এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার সদস্য হাম জালাল বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকদের মূল দাবিগুলো মেনে নিয়ে লঞ্চ মালিকপক্ষ ২০১৬ সালে নৌযান শ্রমিকদের সঙ্গে পাঁচ বছরের একটি চুক্তি করেছিল। সে চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালে শেষ হবে। তাই তাদের ধর্মঘটে যাওয়া অযৌক্তিক।’ তবে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘ওই সময় ১৫টি দাবির মধ্যে শুধু বেতন স্কেল ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। বাকি ১৪টি দাবি তো পূরণ করা হয়নি।’ এ বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আখতার হোসেন বলেন, ‘গত বুধবারের সভায় নৌ পরিবহন খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক দেওয়ার বিষয়ে মনিটরিংয়ের জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তর তাদের বার্ষিক সার্ভে চেক লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এ খাতের শ্রমিকদের খাদ্যভাতা দেওয়ার বিষয়েও বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে আগামী মার্চের মধ্যে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ এরপরেও ধর্মঘটে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় শ্রমিক নেতা শাহ আলম বলেন, ‘শ্রমিকরা বারবার আশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, বাস্তবায়ন দেখতে চায়।’ ফেডারেশনের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধ, ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদান, মালিক কর্তৃক খাদ্য ভাতা প্রদান, নৌযান শ্রমিকদের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ। এদিকে নৌযান শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। সংগঠনের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল গতকাল এক বিবৃতিতে নৌযান শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে দাবি আদায় না হওয়ায় শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নৌ ধর্মঘট আহ্বান করতে বাধ্য হয়েছে শ্রমিকরা।’ এছাড়াও ধর্মঘট শুরু হওয়ার আগেই শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে মালিকপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। অন্যদিকে ধর্মঘট সফল করতে বৃহৎ নৌবন্দর বরিশালে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন নৌযান শ্রমিকরা। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল জেলা সভাপতি হাশেম মাস্টার জানান, তারা ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ, লিফলেট বিতরণসহ নানাভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। Share this:TweetWhatsAppPrint SHARES সারা বাংলা বিষয়: