সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর

প্রশ্ন : সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর। অথবা, সংবিধানের বিভিন্ন ধরন আলোচনা কর।

ভূমিকা :

সংবিধানকে বলা হয় একটি রাষ্ট্রের মূল চালিকান্তি। সংবিধান ছাড়া রাষ্ট্র অস্তিত্হীন। একটি দেশের পরিচয়ই পাওয়া যায় সংবিধানের মাধ্যমে। একটি দেশের সংবিধান সেই দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটকে উপস্থাপন করে থাকে। সংবিধান পাঠের মাধ্যমে একটি দেশের মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

Table of Contents

সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ :

বিশ্বর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংবিধান প্রকৃতি ও যথার্থম্বরূপ জানার সুবিধার্থে সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ  নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতবাদ দেখা যায়।

আইনসভার মাধ্যম প্রণীত:

আইনসভার মাধ্যম প্রণীত এবং বিভিন্ন সফর থেকে প্রচলিত
সংবিধানকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়যথা : ক) লিখিত সংবিধান; খ) অলিখিত সংবিধান

লিখিত সংবিধান :

লিখিত শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার আবশ্যক
মুলনীতিগুলো সুম্পন্টভাবেব লিখিত থাকে। লিখিত সংবিধানের দৃষ্টান্ত হিসেবে সংবিধানের কথা বলা যায়। অধ্যাপক গেটেল বলেছেন, যখন কোনাে দলিলে সরকারি প্রশাসনব্যবস্থার সব মৌলিক নীতিগুলো মার্কিন
যুক্তরান্ট্র, সুইজারল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে, তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে।

অলিখিত সংবিধান :

রাষ্ট্রের শাসন সংক্রান্ত মৌলিক নীতিগুলোে
মূলত প্রথা ও রীতিনীতিভিত্তিক হলে অর্থাৎ লিপিবন্ধভাবে না
থাকলে তাকে অলিখিত শাসনতন্ত্র বলে। অলিখিত শাসনতন্তের উদাহরণ হলো ইংল্যান্ডের সংবিধান।

সংশােধনের পদ্ধতি অনুযায়ী :

সংশােধনের পদ্ধতি অনুযায়ী সংবিধানকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ক, সুপরিবর্তনীয় সংবিধান; খ. দুষ্পরিব্তনীয় সংবিধান।

সুপরিবর্তনীয় সংবিধান :

সাধারণত আইন প্রণয়নের পদ্ধতিতে যে শাসনতন্ত্র সহজে পরিবর্তন করা যায় তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। অধ্যাপক গেটেল বলেছেন, “if a Constitution may be easily amended by the ordinary law making body and procedure, it may be classes as flexible.” ইংল্যান্ডের শাসনতনত্র সুপরিবর্তনীয়।

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান :

সাধারণত আইন পদ্ধতিতে যেখানে শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন করা যায় না, তার জন্য বিশেষ জটিল একটি পদ্থধতি প্রয়োজন হয় তাকে দুম্পরিবর্তনীয় শাসনতন্ত্র বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান হলাে দুষ্পরিবর্তনীয় শাসনতন্ত্রে উপযুক্ত উদাহরণ।

ক্ষমতা বষ্টনের পদ্ধতি অনুযায়ী :

ক্ষমতা বষ্টনের পদ্ধতি অনুযায়ী সংবিধানকে চার শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা : ক, এককেন্দ্রিক সংবিধান; খ. যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান; গ. রাস্ট্রপতিশাসিত সংবিধান; ঘ. সংসদীয় সংবিধান।

এককেন্দ্রিক সংবিধান :

এককেন্দ্রিক সংবিধানে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমগ্র দেশের অইন প্রণয়নের ক্ষমতা
দেওয়া হয়। যেমন বাংলাদেশের সংবিধান।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান :

যুক্তরান্ট্রীয় সংবিধানে কেন্রীয় সরকার এবং প্রাদোশিক সরকারগুলোর মধ্যে সমমর্যাদার ভিত্তিতে ক্ষমতা বন্টন
করে দেওয়া হয়। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ দৃষ্টান্ত দেখা যায়।

রাষ্ট্রপতি শাসিত সংবিধান :

রাষ্ট্রপতি শাসিত সংবিধান  রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।

সংসদীয় সংবিধান :

সংসদীয় সংবিধান মন্ত্রিপরিযদ শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে। যেমন বাংলাদেশের সংবিধান।

জনসাধারণের অংশগ্রহণের নীতি অনুযায়ী :

সরকার পরিচালনায় জনসাধারণের অংশগ্রহণের নীতি অনুযায়ী সংবিধানকে দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা : ক, গণতান্ত্রিক সংবিধান; খ. রাজতান্ত্রিক বা অভিজাততান্ত্রিক সংবিধান।

গণতান্ত্রিক বা প্রজাতান্ত্রিক সংবিধান :

যে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একজন রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্ট সে দেশের স্থবিধান প্রজাতান্ত্রিক।

অভিজাততান্ত্রিক বা রাজতান্ত্রিক সংবিধান :

রাজা বা রানির শাসনাধীন রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্পথা যে সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় তাকে রাজতান্ত্রিক সংবিধান বলে। যেমন: ভূটান ও নেপালের সংবিধান।

রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে :

রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে স্থবিধানকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা ; ক, নীতিসংবদ্ধ সংবিধান; খ. নিরপেক্ষ সংবিধান।

নীতিসংবদ্ধ সংবিধান :

নির্দিষ্ট কিছু আদর্শ বা নীতিকে কেন্দ্র করে প্রণীত সংবিধানকে নীতিসংবন্ধ সংবিধান বলে। যেমন- সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সংবিধান রচিত হয়েছে।

নিরপেক্ষ সংবিধান :

অনেক শাসনতন্ত্রে বিশেষ কোনাে নীতি বা আদর্শের আনুগত্য থাকে না। দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক,
ধরনের সংবিধানকে নিরপেক্ষ সংবিধান বলে । উদাহরণ হিসেবে জার্মানির কথা বলা যায়।

মার্কসীয় দূষ্টিভঙ্গি থেকে :

মার্কসীয় দূষ্টিভঙ্গি থেকে শাসনতন্ত্রকে দুভাগে ভাগ করা
যায়। যথা : ক, বুর্জায়া শাসনতন্ত্র বা সংবিধান; খ. শ্রমিক
শ্রেণির সংবিধান।

বুর্জোয়া শাসনতন্ত্র বা সংবিধান :

মার্কসীয় দৃষ্টেভঙ্গিতে যে সংবিধান সমাজে ধনীকে বা রাষ্ট্রগ্ষমতায় অধিষ্ঠিত ও ক্ষমতার সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির স্বার্থ রক্ষাক্পে প্রণীত হয় তা হচ্ছে বুর্জোয়া সংবিধান। পশ্চিমা বিশ্বের সব দেশের শাসনতন্ত্রকেই মার্কস মূলত বুর্জীয়া শাসনতন্ত্র বলেছেন।

শ্রমিক শ্রেণির সংবিধান :

সমাজে খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেনির স্বার্থরক্ষাকারী শাসনতন্ত্কে শ্রমিক শ্রেণির সংবিধান বলে। বস্তৃত সাবেক সাভিয়েত রাশিয়ায় এ ধরনের সংবিধান প্রয়োেগের চেষ্টা
করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন >> সংবিধান এর উৎসসমূহ সংক্ষেপে আলােচনা কর

উপসংহার :

উপর্যুক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষতে বলা যায় যে,
সংবিধান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গৃহীত হলে তা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখে। সংবিধান ব্যতীত কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামাে সুষ্ঠ্ভাবে চলতে পারে না। সংবিধান বিভিন্ন পরিস্থিতির লক্ষণায় যে, প্রত্যেক প্রকার সরকার ব্যবস্থা বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিদ্যমান রয়েছে।

শেয়ার করুন :

Leave a Comment