সংবিধান উৎসসমূহ লেখ অথবা, সংবিধানের উৎসসমূহ সংক্ষেপে আলােচনা কর ।
ভূমিকা :
সংবিধান দেশের আর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে গৃহীত হয়। প্রত্যিক রাষ্ট্রের নিজম্ব সংবিধান থাকে। এতে জনগনের আশা আকাঙ্খা প্রতিফলত হয়। একটি দেশে চিরন্তন সামাজিক ধারা ও এর কৃষ্টি
সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে সংবিধান প্রণীত হয়। একটি উত্তম ও
কার্যকরী সংবিধান যেকোনাে দেশের অতি মূল্যবান সম্পদ।
[ez-toc]
সংবিধান এর উৎসসমূহ :
নিম্নে সংবিধানের উৎসমূহ আলোচনা করা হলাে :
১. প্রচলিত রীতিনীতি :
একটি দেশের প্রচলিত রীতিনীতি, কু্টি সংস্কৃতিকে সার্বভৌম কর্তৃূপক্ষ অনুমোদন দিলে তা সংবিধানের ধারায় পরিণত হয়। ব্রিটিশ সংবিধানের একটি বড় অংশ এ ধরনের প্রচলিত রীতিনীতি ও প্রথার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
২. গণপরিষদ :
সংবিধান বলবৎ করার জন্য গণপরিষদ খসড়াসংবিধান উথাপন করে। এই খসড়াসংবিধান সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে মূল সংবিধানে পরিণত হয়।
৩. সনদ :
নাগরিকের দাবি পূরণে যেসব সনদ গৃহীত হয় তা
দেশের আপামর জনগণের আশা আকাঙ্ফার প্রতিফলন ঘটায়। ব্রিটিশ সংবিধানে দেখা যায় ব্রিটিশ রাজশন্তি কর্তৃক ঐতিহাসিক দলিল এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের অধিকারের স্বীকৃতি দেয় অধিকারের আবেদন পত্র এবং ১৬৮৯ সালের অধিকারের বিল।
৪. বিচার বিভাগীয় সিন্ধান্ত :
বিচারপতি হিউজেস এ সম্পর্কে বলেন, “আমরা সংবিধানের অধীন, কিন্তু সংবিধান হচ্ছে তাই বিচারপতিরা একে যেভাবে ব্যাখ্যা করেন।” জটিল মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য নিজেদের সুচিন্তিত মতামত প্রয়ােগ করেন, যা পরবর্তীতে ঐ ধরনের মামলার বিচারের জন্য ব্যবহৃত হয় ।
৫. বিধিবন্ধ আইন :
আইনসভা নিজেদের প্রয়াজন মতো আইন পাস এগুলােকে বিধিবন্ধ আইন বলে। বিধিবন্ধ আইনও সংবিধানের মূলনীতি অনুযায়ী গৃহীত হয়। সংবিধানের মূলনীতি বিরােধী কানাে আইন বিধিবন্ধ হতে পারে না। যেমন ১৮৩২,১৮৬৭ ও ১৮৮৪-৮৫ সালের প্রণীত ভােটাধিকার সম্প্রসারণ সংস্কার আইন ইত্যাদি ব্রিটিশ সংবিধানের উৎস হিসেবে বিবেচিত।
৬. পার্লামেন্ট আইন :
পার্লামেন্ট গৃহীত আইন সংবিধানের অংশ বিশেষ। পার্লামেন্ট সদস্যদের আইনের খসড়া, আইনের ওপর তর্ক বিতর্ক সংবিধানের উৎস হয়ে ওঠে। পার্লামেন্ট সদস্যদের সুযােগ-সুবিধা মর্যাদা আইনের ন্যায় বলবৎ।
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি
হলাে সংবিধান। কোনো দেশের সংবিধান প্রণয়ন বা প্রতিষ্ঠার পিছনে বিভিন্ন বিষয় জড়িত। সংবিধানের উৎস হিসেবে একটি দেশের চলিত রীতিনীতি, রাজনৈতিক সংগ্রাম, কৃষ্টি সংস্কৃতিকে বিবেচনায় এনে সংবিধানকে বিশ্লেষণ করতে হবে। তাহলে আমরা সে দেশের
সংবিধানের স্বরূপ ও তার প্রেক্ষাপট বুঝতে সক্ষম হবাে।