প্রশ্ন: উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার কারণ বর্ণনা কর অথবা Explain the reasons why democracy fails in developing countries অথবা উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র কেন ব্যর্থ? আলোচনা কর।
ভূমিকা
গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। কিন্তু রাস্ট্রবিজ্ঞানের অপর কোনাে বিষয়কে কেন্দ্র করে এত বেশি আলােচনা সমালােচনার সৃষ্টি হয়নি। তবে উন্নয়নশীল দেশসমূহে এই শাসনব্যবস্থায় ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা বার বার লক্ষ করা যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে গণতন্ত্রের বিকাশ সুষ্ঠভাবে না হওয়ার পিছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। গণতন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার ঘটনাগুলাে বিশ্লেষণ করলে এই কারনগুলো স্পষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।
উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার কারণ
উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার কারণসমৃহ নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলাে:
১. নেতৃত্বের সংকট :
উন্নত বিশ্বের মতাে উন্নয়নশীল দেশে নেতৃত্ব গড়ে উঠার প্রক্রিয়াটা সুশৃঙ্খল বা যুগোেপযোেগী নয়। এই কারণে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়। ফলে উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
২. অযােগ্যর শাসন :
উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার কারন হিসেবে অন্যতম গুরত্বপূর্ণ কারণ হলাে শাসনভার অযােগ্য ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকীর্ণতার সুযােগ পেয়ে অযােগ্য ব্যক্তিরা শাসনভার দখলে এগিয়ে থাকে।
৩. সাময়িক হস্তক্ষেপ :
উন্নয়নশীল দেশসমূহে সাময়িক হস্তক্ষেপ খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাময়িক হস্তক্ষেপের ফলে গণতন্ত্রের পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটছে। যার ফলে গণতন্ত্র তার পূর্ণতা লাভ করার কাছাকাছি যেতে পারে না।
৪. অর্থনৈতিক সমস্যা :
উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ব্যর্থ হবার পিছনে বড় ভূমিকা রাখে অর্থনৈতিক সমস্যা। জনগণ যখন অর্থনৈতিক দৈন্যতার মধ্যে দিনাতিপাত করে তখন তার আদর্শ বা নীতির ব্যাপারে পরােয়া করার খেয়াল থাকে না।
৫. পরমতসহিষ্ণুতার অভাব :
উন্নয়নশীল দেশের মানুষের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ থেকে জনগণ দূরে থাকে। ফলশ্রুতিতে গণতন্ত্র কায়েম থাকলেও তার সফলতা বা স্বার্থকতা থাকে না।
৬. আইনের শাসনের অভাব :
উন্নয়নশীল দেশসমূহে আইনের শাসনের পরিবর্তে দলীয় প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শাসনকার্যকে বাধাগ্রস্ত করার নজির লক্ষ করা যায়। ফলে গণতন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
৭. সংখ্যালঘুদের সমস্যা :
সংখ্যালঘুদের যথার্থ স্বাধীনতা, সুবিধা এবং ক্ষমতায়ন থেকে বিরত থাকা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রির সাধারণ ঘটনা। অথচ গণতন্ত্রের মৌীলিক শর্তসমূহের মধ্যে সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে যংথাযথ ব্যবস্থার বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
<< Join Our Telegram Channel >>
৮. অস্থায়ী শাসন :
বেশিরভাগ দেশেই গণতন্ত্র ক্ষণস্থায়ী হয় এবং উন্নয়নশীল দেশে এর স্থায়িত্ব আরও কম হয়। কেননা উন্নয়নশীল দেশে সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি শাসনব্যবস্থার স্থায়িত্বের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলে থাকে।
৯. দুনীতি ও স্বজনপ্রীতি :
বেশিরভাগ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনে সুবিধা নিতে চেষ্টা করে থাকে। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে না।
১০. পেশাদারি রাজনীতি :
উন্নয়নশীল দেশে একশ্রেণির পেশাদারি।রাজনৈতিক নেতার সৃষ্টি হয়। গণতন্ত্রের নীতির সাথে আপােষ করে তারা তাদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখার চেস্টা করে। ফলে গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় এবং ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
১১. দলীয় প্রাধান্য :
উন্নয়নশীল দেশে প্রতিষ্ঠিত সরকার দেশের আইন, শাসন ও বিচারকার্য দলীয় সমর্থক বা কর্মীদের পৃষ্ঠপােষকতা করে। যার ফলে নাগরিক সুবিধায় গণতান্ত্রিক নীতি ব্যাহত হয়। এমনকি এভাবে বহু রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটে যাদের প্রয়ােজনীয়তা নেই।
১২. ভাবাবেগ :
যুক্তির পরিবর্তে ভাবাবেগ প্রাধান্য পায় উন্নয়নশীল সামাজিক এবং
রাজনৈতিক কাঠামােতে। ফলে গণতান্ত্রিক নীতির সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আপােষ করার মানসিকতা তৈরি হয়। এভাবে গণতান্তিক চর্চা ব্যর্থ হয়।
১৩. বহিঃশন্তির প্রভাব :
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বহিঃশক্তি বিশেষ করে প্রভাবশালী উন্নত দেশসমূহের প্রভাব বিদ্যমান থাকে। ফলে জনগণের মতের বিপক্ষে অনেক সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন হয়। এভাবে গণতন্ত্র ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হয়।
আরও পড়ুন>> গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর
১৪. পুঁজিবাদের প্রভাব :
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাব ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের প্রতি গুরুত্বারােপ করেন। ফলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংকীর্ণতা চর্চা শুরু হয়। এভাবে গণতন্ত্রের নীতিকে ব্যাহত করে।
১৫. লােকরঞ্জনবাদ :
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অধিকাংশর মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে অনেকে এই সুবিধা নিয়ে নানা উগ্নবাদী চিন্তার বিস্তার ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসার পথকে সহজ করে নেয় । আর এক লােকরঞ্জনবাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এভাবে লােকরঞ্জনবাদ গণতন্ত্রের ব্যর্থ হবার পিছনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
উপসংহার :
উপরযুক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণতন্ত্র সকল রকম সমাজের জন্য উপযুক্ত নয়। শিক্ষাগত যােগ্যতা, মূল্যবােধসম্পন্ন মানুষ বা নাগরিক সমষ্টির কাছে গণতন্ত্রের স্বার্থকতা আশা করা যায়। অন্যথায় এর ফলাফল উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের মতো হবে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলাে গণতন্ত্রের শর্তসমূহ পূরণ করতে উদ্যোগী হলে সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।