প্রশ্ন : সংসদীয় সরকারের সফলতার শর্তাবলি আলোচনা কর অথবা, Discuss the conditions of success of parliamentary government অথবা, সংসদীয় সরকারে কীভাবে সফল করা যায়? বর্ণনা কর।
ভূমিকা
সাম্প্রতিক কালে বিশ্বের অধিকাংশ রাস্ট্রের সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। জনকল্যাণর জন্য অন্যান্য সকল শাসনব্যবস্থার চেয় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা অধিক উপযােগী তবে এই শাসনব্যবস্থা সফল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। এসব শর্ত পূরণ ব্যতিরেকে সংসদীয় পদ্ধতির সফলতা কামনা করা যায় না। মৃূলত সংসদীয় সরকারকে সফল করার জন্য জনগণকেই প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সংসদীয় সরকারের সফলতার শর্তাবলি
সংসদীয় সরকারের সফলতার শর্তাবলি নিশ্নে আলােচনা করা হলাে :
১. দ্বি দলীয় ব্যবস্থা :
দেশে দ্বি দলীয় ব্যবস্থার অস্তিত্ব সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বহুদলীয় ব্যবস্থায় এই শাসনব্যবস্থা ভঙ্গুর ও দুর্বল ব্যবস্থায় পরিণত হয়। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালথিষ্ঠ উপস্থিতি নিশ্চিতের মাধ্যমে সংসদের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন করা যায়। সেই সাথে আইন ও প্রশাসনিক
কোজে গতিশীলতা বৃদ্ধি করা যায়।
২. স্থায়ী দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা :
যখন মন্ত্রিপরিষদের হাতে সকল প্রশাসনিক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে তখন মন্ত্রিপরিষদের কার্যে সুবিধার জন্য সংসদ বা আইনসভার স্থায়ী দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়ােজন। স্থায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা মন্ত্রিদের তাদের কাজে পূর্ণ মনােনিবেশ স্থাপনে সহযোেগিতা করবে।
৩. জনমত :
সংসদীয় সরকারের সাফল্যের ক্ষেত্রে সুগঠিত ও সুস্থ জনমত গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে সংসদীয় ব্যবস্থার সফলতার মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুষ্ঠ জনমতের জন্য জনগণের মাঝে শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে।
৪. শক্তিশালী বিরােধী দল :
শক্তিশালী বিরােধী দল ব্যতীত সংসদীয় সরকারের সফলতা কল্পনা করা যায় না। বিরােধী দল যদি মন্ত্রিসভার কার্যক্রম সম্পর্কে দায়িত্বের সাথে অবহিত না হয়ে তাদের অসাংবিধানিক এবং অকল্যাণকর কাজের বিরোধিতা না করে, তাহলে সংসদীয় পদ্ধতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
৫. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব :
সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রকৃত শাসক হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের দক্ষতা এবং যােগ্যতার ওপর মন্ত্রিপরিষদের কর্মস্পূহা এবং প্রশাসনিক সাফল্য নির্ভর করে। প্রধানমন্ত্রীর অযােগ্যতা শুধু মন্ত্রিসভাই নয়, পুরো দেশের ক্ষতিসাধনের জন্য যথেষ্ট।
Ad : সিঙ্গাপুর টাকার রেট কত আজকে | আজকের সিঙ্গাপুর ডলার রেট বাংলাদেশ
৬. মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীলতা :
মন্ত্রিসভার সদস্যগণ যদি দায়িত্বশীলতার সাথে রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে না আসে তাহলে সংসদীয় পদ্ধতি তার সফলতা হারায়। মন্ত্রীদের দায়িত্বশীলতা সংসদীয় পদ্ধতির সফলতার অন্যতম শর্ত।
৭. গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা :
সংসদীয় শাসনব্যবস্থা সবসময় জনগণের অনুকৃল শাসনব্যবস্থা। এক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের প্ষে ও বিপক্ষে জনগণর মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা অতীব জরুরি বিষয়। সেই সাথে জনমত প্রকাশের জন্য সব ধরনের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রয়োজন।
৮. মন্ত্রিসভা ও আইনসভার সুসম্পর্ক :
মন্ত্রিসভা ও আইনসভার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক সংসদীয় পদ্ধতির অন্যতম প্রধান শর্ত। এই সুসম্পর্ক কল্যাণকর কাজের জন্য সহায়কে হয়ে থাকে। অধ্যাপক লাস্কি বলেন, “The secret of success of Parliamentary Government lies in the control of the House of commons by the Cabinet.”
৯. রাজনৈতিক দলসমূহের ভূমিকা :
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ব্যবস্থা বা সংসদীয় ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলসমূহের ভূমিকা থাকে ব্যাপক। রাজনৈতিক দলসমূহের গঠনমূলক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ওপর পুরাে ব্যবস্থায় সাফল্য নির্ভর সংকীর্ণতা, নিদ্তিয়তা সংসদীয় পদ্ধতির যেমন ক্ষতিসাধন করে তেমন ক্ষতিসাধন করে রাষ্ট্রের।
আরও পড়ুন >> সংসদীয় সরকার কাকে বলে? সংসদীয় সরকারের দোষ-গুণ আলােচনা কর
১০. ধনবৈষম্য ও দারিদ্র্যের অবসান :
জনগণের মধ্যে তীব্র ধনবৈষম্য থাকলে বিত্তবানরা সংসদীয় পদ্ধতির সুযােগ নিতে পিছপা হয় না। এ কারণে ধনবৈষম্য হ্রাসের মাধ্যমে ও দারিদ্র্যতা দূরীকরণের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সফলতার পথকে সুগম করা সম্ভব।
১১. নামমাত্র শাসক প্রধান :
সংসদীয় ব্যবস্থায় একজন নামমাত্র প্রধান শাসক প্রয়ােজন। তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের পদ অলংকৃত করবেন কিন্তু সরকার প্রধানের কাজে কোনাে প্রকার বাধা সৃষ্টি করবেন না। তাকে অবশ্যই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। প্রকৃত ক্ষমতা অরপিত হবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
১২. পূর্ণ দায়িত্বশীলতা :
সংসদীয় ব্যবস্থা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য শাসন বিভাগ আইন বিভাগের কাছে পরিপূর্ণ দায়ী আইনসভার প্রাধান্য না থাকলে পার্লামেন্টারি শাসন চলে না।
১৩. রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা :
রাজনৈতিক দলগুলোর উদারনৈতিক মনােভাব, পারস্পরিক সহিষ্ণুতা সংসদীয় ব্যবস্থার সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। অন্যথায় সংসদীয় পদ্ধতি স্থার্থকতা বা উদ্দেশ্য হারাবে।
১৪. আইনসভা বাতিলের ক্ষমতা :
মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক আইনসভা বাতিলের ক্ষমতা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কেবিনেট ও পার্লামেন্টের মতানৈক্য দেখা দিলে নির্বাচকমণ্ডলীর রায়ের ওপর আস্থাশীল হতে হবে। ফলে কেবিনেটের প্রতি আইনসভা ও আইনসভার প্রতি ক্যাবিনেটের সহযােগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
উপসংহার
উপর্যুক্ত আলাচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আলােচিত শর্তাবলি পূরণ করতে পারলে যেকোনাে রাষ্ট্র সংসদীয় পদ্ধতিতে সফলকাম হতে পারবে। এসব শর্ত পূরণ না হলে সংসদীয় পদ্ধতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই সংসদীয় সরকারের সফলতার জন্য শর্তসমূহ পূরণ করা অপরিহার্য।